‘খবরের যাদুঘর’
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:
স্বপ্নের দেশ আমেরিকা, অনেক কারণেই বিশ্ব মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এদেশের অনেক আকর্ষনীয় এবং বড় প্রতিষ্ঠান ও দর্শনীয় সামগ্রী যুগযুগ ধরে কাছে টানছে মানুষকে।এই নিউইয়র্ক এ রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর ম্যাসি, সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী বানর্স এন্ড নোবেল। এমনি ধরণের অনেক বড় ও আকর্ষনীয় প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্নস্থানে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন, এখানেই গড়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে খ্যাত ফ্রিয়ার গ্যালারি, ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড সেংস মিউজিয়াম, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি, ন্যাশনাল গ্যালারি অব আর্ট, হার্শইন মিউজিয়াম অব দ্যা আমেরিকান-ইন্ডিয়ান। এমন সব বিচিত্র সংগ্রহশালার পরিমণ্ডলেরই নতুনতম সংযোজন ‘নিউজিয়াম’।
নিউজিয়াম! নাম শুনে প্রথমেই একটু ভিরমি খেতে হয়। মিউজিয়ামের ভুল উচ্চারণ নয় তো! মোটেও তা নয়। বাস্তবে নিউজিয়াম হলো নিউজ মিউজিয়াম বা নিউজের মিউজিয়াম। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় সংবাদ বা খবরের জাদুঘর।
যার মধ্যে আছে মনমূগ্ধকর ১৫টি গ্যালারি ও ১৫টি হল। গ্যালারিগুলো সবার কাছেই আকর্ষণীয়। প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুটের সাততলা বিশিষ্ট সুরম্য ভবন। শহরের অন্য জাদুঘর দেখতে পয়সা না লাগলেও নিউজিয়াম দেখতে লাগে ২৫ ডলার। কারণ, এটি বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত জাদুঘর। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যের রসলিনে নিউজিয়াম করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে নিউজিয়ামের নতুন যাত্রা শুরু হয় ওয়াশিংটনে ২০০৮ সালে। পাঁচ বছরে ২৫ লাখ মানুষ এই জাদুঘরে পা রেখেছে।সংবাদের এই জাদুঘরে অদ্ভুত একটা নিয়ম আছে। ষষ্ঠ তলা থেকে দেখতে দেখতে জাদুঘরের নিচে নামতে হয়।
পঞ্চদশ শতক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সংবাদপত্রের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে এ নিউজিয়ামে। রয়েছে ৩০ হাজার ঐতিহাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিন। পঞ্চম তলাজুড়ে সাজানো সংবাদপত্রের ইতিহাস। এ নিউজিয়ামে ঢুকলেই প্রথমে আপনার চোখে পড়বে বড় করে লেখা ওয়াশিংটন পোস্ট–এর প্রকাশক ফিলিপ গ্রাহামের উদ্ধৃতি, সংবাদপত্র হচ্ছে ইতিহাসের প্রথম খসড়া।এরপর এক এক করে দৃষ্টি পড়বে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনায় কোন পত্রিকা কী শিরোনাম করলো সেসব।
জাদুঘরের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে, তার সবই রয়েছে এ নিউজিয়ামে। বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের কলম, ক্যামেরা, পোশাক ও গাড়ি সংরক্ষিত আছে।আপনি নিউজিয়াম সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে গাইড সব ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিবেন। চতুর্থ, তৃতীয় ও দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত গ্যালারির পাশাপাশি রয়েছে ভিডিও প্রদর্শনী। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা সাংবাদিকদের নাম ও ছবি টাঙানো রয়েছে তৃতীয় তলায়।
ঘটনাবহুল নিউইয়র্কের ৯/১১-এর ঘটনা নিয়ে রয়েছে একটি কর্ণার। ওই দিন বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের সুউচ্চ ভবনের ওপরে যে অ্যানটেনা ছিল, সেটি সংরক্ষিত রয়েছে নিউজিয়ামে।এছাড়া মুক্ত গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে বিশ্বের দেশগুলোর অবস্থান মুক্ত (সবুজ), আংশিক মুক্ত (হলুদ) ও মুক্ত নয় (লাল)—এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করেছে নিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ।যেখানে বাংলাদেশ ও ভারত হলুদে থাকলেও পাকিস্তানকে দেখা যাবে লাল কাতারে।
নিউজিয়ামের দ্বিতীয় তলায় একটি মজার গ্যালারি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের কুকুরপ্রীতি নিয়ে। আব্রাহাম লিংকন, জন এফ কেনেডি থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পোষা কুকুরের নাম ও ছবি রয়েছে এতে। নিচতলায় রয়েছে ফটোগ্রাফিতে পুলিতজার বিজয়ীদের ছবি ও তাঁদের তোলা ছবি।
জাদুঘর বিশ্ব সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের এক প্রবল হাতিয়ার। সংবাদপত্রের স্বাধীন ইতিহাস সংগ্রহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ছোট ছোট অনেক জাদুঘর আছে। সেই তালিকায় নিউজিয়াম নি:সন্দেহে একটি অনন্য সংযোজন।
উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদপত্রের ইতিহাস শুরু হয়েছিল দু’শ পঁচিশ বছর আগে। মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে বলা হয়েছিলো বাক স্বাধীনতা তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা। আর দীর্ঘ বছর পরে হলেও এদেশেই তৈরী হয়েছে বিশ্বের প্রথম সংবাদ যাদুঘর। এই আধুনিক বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছেন- এসব ছবি নিউজিয়ামে সংরক্ষিত হবে, পৃথিবীর দেশে দেশে এ ধরণের সংবাদ যাদুঘর গড়ে উঠবে এই প্রত্যাশা আমাদের।
প্রতিক্ষণ/এডি/জহির